top of page
Search

মুরগি

Updated: Feb 24, 2023



একটা সভ্য সংস্কৃতির দেশে পকেটে ভোটার আই কার্ড রাখা চার-চারটে তাজা যুবককে গুলি করে মেরে দিয়েছিল স্বাধীন দেশের সেনা ! তারপর যুক্তি দিয়েছিল, আত্মরক্ষায় এই হত্যা ! আত্মরক্ষা ? কীসের আত্মরক্ষা ? যে দেশের সেনা একটা গ্রামের ছেলেমেয়েদের হাতাখুন্তির কাছে আত্মরক্ষা করতে সরাসরি বুকে গুলি ছোড়ে, সে দেশের সেনাকে অপসারিত করা হোক, দুধ কলা দিয়ে বন্ধ হোক কালসাপ পোষা । বন্ধ হোক এই ভোট প্রক্রিয়াও । গণতন্ত্র এ দেশে অচল ।


ree

এই যে মেকি সেকুলারিজম, এই যে হিন্দুত্ব, রাম মন্দির, এই যে ভিক্ষা দিয়ে দিয়ে একটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে তাকে যুগ যুগ ধরে পঙ্গু করে রাখার প্রয়াস--এ সবই আসলে দানাশস্য, পোল্ট্রি ফুড । এই ফুড খাইয়ে খাইয়েই ডবকা মুরগি বানানো হচ্ছে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে । এভাবেই সারা দেশকে মুরগি বানাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো । দলীয় আদর্শ, নৈতিকতা--এ সব এখন সোনার পাথরবাটি ছাড়া কিচ্ছুটি নয় । এই মুরগিগুলোকে জবাই করে নিজের আখের গুছোনোই এখন নেতা-মন্ত্রীদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য এবং মোক্ষ । যে যত নিপুণভাবে এ কাজটা হাসিল করছে, তথাকথিত সমাজজীবনে সে তত সফল এবং ক্ষমতাবান । আর মুরগিগুলো দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে বেকারত্বের আরও অন্ধকারে, আমপানে ঘর ভেঙে গেলেও পাচ্ছে না ঘর, কাজের জন্য ছুটে যেতে হচ্ছে অন্য প্রদেশে, করোনা লাগলে কেউ বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে না তাদের, পেটে খিল দিয়ে একটু একটু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে তাদের ছেলেপুলে, মা-বউ । তাদের জন্য কে খরচ করবে ? কেন করবে ? ওই টাকাতেই তো দিল্লি থেকে চার্টার্ড প্লেন পাঠাতে হবে কোনও চোরকে দলবদলের উত্তরীয় পরানোর জন্য ! এই গণতন্ত্র আর চলে ? চলে আর এই গণতন্ত্র ?


মুরগি বানানোর আরও হরেকরকম অত্যাশ্চর্য কৌশল আছে । এমনকী, রাজনৈতিক নেতারাও, নেতা মানে যে সে নেতা নয়, দলের সুপ্রিমোরাও, মুরগি হচ্ছেন কিছু অতি চালাক নেতা-হতে-মরিয়া ব্যক্তির কাছে । বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দিকেই তাকান না ! লকডাউন পরবর্তী টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি জীবন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল । ধর্ষকাম অভিনেতা, ধান্দাবাজ পরিচালক কিংবা ধূর্ত শেয়ালের মতো দেখতে নায়ক...সবার অবস্থাই ছিল কম বেশি পড়তির দিকে । আর বাংলা সিরিয়াল কিংবা এককালে একটা-দুটো বাংলা ছবিতে নায়িকার-শিকে-ছেঁড়া তৃতীয় শ্রেণির কিছু অভিনেত্রীর তো আঁশবঁটিতে ওঠার আগে শেষ খাবি খাওয়ার অবস্থা তখন । বিধায়ক হয়ে টাকা লুঠ করার বেপরোয়া স্বপ্নে ক্ষুধার্ত গৃধিনীর মতো ঘুরেছে এরা সারা দিন ঠা ঠা পড়া রোদ্দুরে । মাথার ওপর লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা । গাড়ি-বাড়ি-শরীর বিক্রি করলেও সে ঋণ শোধ হবার নয় । কোনও কোনও জুটি আবার দু'দলে ভাগ হয়ে শেষ চেষ্টা চালিয়েছিল গাছের খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তলারও কুড়োবার । সারা দিন দু'দলের হয়ে গলা ফাটিয়ে, একে তাকে জাপটে ধরে, নেচে-কুঁদে-ছুটে, রাতে একটুখানি ফুরসত খুঁজে যুগলে বিছানায় যাওয়ার আগে, শ্বেতপাথরের বেসিনে গিয়ে হাতমুখ থেকে ছোটলোকের স্পর্শ ধুতে ধুতে দু'জনে দু'জনকে বলেছে, "কেমন মুরগি বানালাম মোদি-মমতা দু'জনকেই ! একজন তো জিতবই, সুতরাং চিন্তা মাত করো..."


সত্যিই তো, মোদি-মমতাই যেখানে মুরগি হয়েছেন, সেখানে আমরা চার-ছ'অক্ষরের বোকারা তো জবাই হওয়ার জন্যই জন্মাই...


আমরা বোধ হয় খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছি । ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, পৃথিবীময় নিঃস্ব সর্বহারা মানুষ কীভাবে জীবনে ফিরে এসেছে । লড়াই করতে করতে, লড়াই করতে করতে, কেশে কেশে মুখ দিয়ে রক্ত তুলে, সে আবার জীবনের গান গেয়েছে । ছিনিয়ে নিয়েছে নিজের অধিকারের যাপন । মানুষ বেঁচে গিয়েছে । টিকে গিয়েছে জীবন । আজও বোধ হয় সেই রকমই কোনও আন্দোলনের প্রয়োজন । দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, প্রতারিত ভারতবাসীর সীমাহীন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে লোলুপ সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে খানখান করে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ।

 
 
 

Comments


bottom of page