শঙ্খ ঘোষ: ওই একবারই শঙ্খদা বলে ডেকেছি ওঁকে...
- rajatsubhrablog
- Feb 5, 2024
- 6 min read
(আজ ৫ ফেব্রুয়ারি, শঙ্খ ঘোষের জন্মদিন । এই সুযোগে কিছু কথা, কিছু স্মৃতি । যেন সমুদ্রকে ফিরে দেখা । যেন সৈকতে বসে কিছু স্মৃতি কুড়োনো । ঝিনুকের মতো । সারা জীবনের সম্পদ ।)

২০০৫ সালের কথা । স্থির করলাম 'ভালোবাসা'র বিশেষ শান্তিনিকেতন সংখ্যা বানাব । ততদিনে বিদ্যোৎসমাজে 'ভালোবাসা' বেশ একটা সম্মাননীয় জায়গা করে নিয়েছে নিজগুণে । 'ভালোবাসা' হল শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির মননশীল বাংলা ত্রৈমাসিক । বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যা তত দিনে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে । লেখক তালিকাও বরাবরই বেশ সমৃদ্ধ--মহাশ্বেতা দেবী, নবনীতা দেবসেন থেকে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, উৎপকুমার বসু, দিব্যেন্দু পালিত, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, আলোক সরকার...কে লেখেননি এই পত্রিকায় ? কখনও শুভপ্রসন্ন কখনও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের তুলিতে প্রচ্ছদও হয়ে উঠত মোহময় ! তো কয়েক মাসের প্রস্তুতিতেই শান্তিনিকেতন সংখ্যার জন্য আকাঙ্ক্ষিত লেখাগুলো আস্তে আস্তে আসতে লাগল হাতে, যদিও এর পেছনে পরিশ্রমের ইতিহাতটুকু এখানে অনুল্লেখিতই থাক । শিবনারায়ণবাবু (মনস্বী শিবনারায়ণ রায়), ভবতোষদা, (অধ্যাপক ভবতোষ দত্ত), যোগেনদা (শিল্পী যোগেন চৌধুরী), সোমেনদা (আশ্রমিক সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়), সুধীরবাবু (চিন্তাবিদ সুধীর চক্রবর্তী), ভানুবাবু (বইপাড়ার প্রাণপুরুষ সবিতেন্দ্রনাথ রায়)...সকলেই তাঁদের টাটকা লেখাগুলো লিখে পাঠালেন শান্তিনিকেতনের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসায় । রিণাদির বাবার কাছে শ্রুতিলিখন করে লেখা নিয়ে এলাম নিজের হাতে--চিদানন্দবাবু তখন নিজে হাতে লিখতে পারেন না, সে সময়ে তাঁর অনেক লেখারই অনুলিখন করেছি আমি । কিন্তু এত কিছুতেও আমার মন যেন ভরল না--কোথাও একটা অসম্পূর্ণতার কাঁটা তখনও আমাকে দিনরাত বিদ্ধ করে চলেছে । বলা বাহুল্য, সেই কাঁটা হলেন শঙ্খ ঘোষ ।
শঙ্খ ঘোষ ছাড়া শান্তিনিকেতন সংখ্যা হয় নাকি ? শান্তিনিকেতনের ভয়াবহ অবক্ষয়ের কাহিনি তাঁর মতো করে কে বলতে পারবেন নির্ভয়ে ? কেই বা তাঁর মতো করে শিখিয়ে দেবেন সংকটোত্তীর্ণতার মন্ত্র ? আমাদের 'শান্তিনিকেতন বাঁচাও' আন্দোলনের ধিকিধিকি আগুনকে তাঁর মতো করে কে তবে উসকে দেবেন অমন দুঃসাহসী আপসহীন কলমে ? কিন্তু উপায় ? তিনি তো আমাকে চেনেন না । আর চিনলেই বা কী, আমার মতো ত্রিশ অনুত্তীর্ণ এঁচড়ে পাকা সম্পাদককে কেনই বা তিনি লেখা দেবেন ? শুনেছি তাঁর একটি টাটকা লেখা পাওয়া নাকি অনেক ভাগ্যের ব্যাপার, ডাকসাইটে সম্পাদকদের কাছেও সে-জিনিস ঈশ্বরপ্রাপ্তির সমান । সেই শঙ্খ ঘোষ আমাকে নতুন লেখা লিখে দেবেন ? তাও আবার প্রবন্ধ ! দিবাস্বপ্ন নাকি ? মনকে বোঝালাম, এ আশা শুধু দুরাশাই নয়, মূঢ়তার নামান্তর ।
ধরলাম সুধীরবাবুকে, "প্লিজ একটু রেকমেন্ড করে দিন ।" আঁতকে উঠলেন সুধীরবাবু, "শঙ্খ ঘোষকে রেকমেন্ড ? তা হলেই হল ! উনি রেকমেন্ডেশন পছন্দ করেন না, তুমি জানো না ?"
"তা হলে উপায় ?"
"ওঁকে ফোন করো, সরাসরি ওঁর সঙ্গে কথা বলো ।" এখানেই আমার আপত্তি । আমার মতো একজন অনভিজ্ঞ অপরিচিত তরুণ সম্পাদক ওঁকে লেখা চাইবে কোন ভাষায় ? উনি তো পত্রপাঠ না করে দেবেন । শিবনারায়ণবাবুর কাছে গেলাম । অত্যন্ত স্নেহ করতেন তিনি আমায় । প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তখন ওঁর শান্তিনিকেতনের বাড়িতে আমার যাতায়াত । শিবনারায়ণবাবু পরামর্শ দিলেন সরাসরি ওঁর কাছে পৌঁছে যেতে । সেখানে গিয়ে আন্তরিক আকুতি প্রকাশ করলে, তিনি তা উপলব্ধি করে আমাকে ফিরিয়ে নাও দিতে পারেন । এই হল শিবনারায়ণবাবুর অভিমত ।

কিন্তু আমায় দেখলে তো উনি আরওই লেখা দেবেন না । একজন ত্রিশ অনুর্ধ্ব রোগাপাতলা অত্যুৎসাহী সম্পাদককে সামনে থেকে দেখলে, আমার সন্ত্রস্ত মন আশঙ্কা করেছিল, লেখা পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে । এই সব সাতপাঁচ ভেবে ফোনই করে বসলাম একদিন । কোনও রকম ভয়ডর না করে, লজ্জার মাথা খেয়ে, গলা মোটা করে বলেই ফেললাম, "শঙ্খদা আছেন ?" যদিও নামের পাশে এই দা-যুক্ত সম্বোধন বসাতে মরমে মরে যাচ্ছিলাম সে দিন । জীবনে ওই একবারই ওই সম্বোধনে ডেকেছি তাঁকে, যদিও সুনীলদা থেকে শুরু করে তাঁর সমসাময়িক, এমনকী, পূর্বসূরি অনেক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিকেও দাদা বলে ডাকতে কখনও কোনও সংকোচবোধ হয়নি আমার । উনি তাঁর চিরস্নিগ্ধ স্মিত কণ্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, "কে বলছেন ?"
"আমি বিশ্বভারতী থেকে রজত মজুমদার বলছি ।" এ কথা বলাতেই বিশ্বভারতীর তদানীন্তন কোনও অধ্যাপকের সঙ্গে সম্ভবত উনি আমাকে গুলিয়ে ফেললেন মনে হল । আমি কোনও রকম সংশোধনের রাস্তায় না হেঁটে, আমার অভিপ্রায় স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করলাম । উনি আমাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন না, আবার লেখা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতিও দিলেন না । স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মৃদু কণ্ঠে আমায় দেখা করতে বললেন একদিন । আমি তো প্রমাদ গুনলাম । বিশ্বভারতীর ভারিক্কি অধ্যাপক-সম্পাদককে যদি বা তিনি লেখা দিতেন, আমায় দেখলে তো সে সম্ভাবনাটুকুও নিভে যাবে । নাছোড়বান্দার মতো শেষ চেষ্টা করলাম, "কুরিয়ারে পুরোনো কয়েকটা সংখ্যা পাঠিয়ে দিই ?"
"হ্যাঁ দিন ।"
"আর লেখাটা যদি...মানে...নভেম্বরে সংখ্যাটা প্রকাশ পাবে আরকী !"
"রজতবাবু, আপনি দেখা করবেন ।"
এর পর আর কোনও কথা চলে না । ওঁর মুখে 'রজতবাবু' এবং 'আপনি' সম্বোধন আমাকে যৎপরোনাস্তি পীড়া দিল । রিসিভারটা রাখার পর লজ্জায় হেঁট হয়ে যাওয়া মাথাটা টেবিলে নামিয়ে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম । তারপর ভাবলাম আমার সামনে এখন দুটো বিকল্প--এক, লেখা পাব না এটা মেনে নেওয়া; দুই, দেখা করে লেখা পাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করা । অনিবার্যভাবেই দ্বিতীয় পথটা বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হল ।
এক ঝকঝকে রবিবাসরীয় সকালে কবির বাসভবনে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির সেই অবিসংবাদী অভিভাবকের মুখোমুখি হলাম অবশেষে । উনি আমায় দেখে স্মিত হেসে বললেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইংরেজির মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে আমি তোমায় গুলিয়ে ফেলেছিলাম ।" আমি নির্বাক । তাকিয়ে আছি মেঝের দিকে । উনিই মুখ খুললেন, "তোমার পাঠানো সংখ্যাগুলো সব পেয়েছি । কিছু পড়েছি । ভাল কাজ করছ । চালিয়ে যাও ।" আমি বুকে বল পেলাম । এক অবিশ্বাস্য শক্তিতে শক্তিমান হয়ে উঠলাম মুহূর্তে । এ কথা-সে কথার পর তুললাম আসল কথা । উনি বললেন, "একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে যে স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান চলছে, আন্তর্জাতিক যার খ্যাতি, যাকে কেন্দ্র করে বাঙালির হৃদয়াবেগ অবিস্মরণীয়, তার অতীত ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচার করতে বসলে দীর্ঘ একটা পরিসরের দরকার । অনেককাল ধরে অনেকেই সে বিচার করছেন । এ বিষয়ে নতুন কোনও তথ্য যোগ করতে পারি বা নতুন কোনও দিশা দেখাতে পারি, এমন সাধ্য আমার নেই । তবু তোমার দাবি মতো একটা-দুটো পুরোনো কথাই নতুন করে লিখব আরকী !" আমি তো যুদ্ধ জয়ের আনন্দে পাগলপারা । যে-লেখকের লেখা পাওয়ার জন্য তাবড় তাবড় সম্পাদকরা হন্যে হয়ে বসে থাকেন পায়ের কাছে, মাসের পর মাস পিছিয়ে দেন প্রস্তাবিত সংখ্যার প্রকাশ, তিনি, হ্যাঁ তিনি --শঙ্খ ঘোষ--এই অপরিণত নগণ্য এক সম্পাদককে বলছেন, "নভেম্বরে প্রকাশ বললে, না ? আচ্ছা দেখছি কত তাড়াতাড়ি কাজটা করে উঠতে পারি !"

আসলে কারা এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত, লেখক তালিকাতেই বা কারা রয়েছেন, সম্পাদক জ্ঞানজ্যেষ্ঠ অধ্যাপক না অনতিতরুণ সাহিত্যকর্মী...এ সবে ওঁর কিছুই যায় আসে না । শুধু শান্তিনিকেতনকে ভালবাসেন বলেই সাহায্যের আজানুলম্বিত হাত বাড়িয়ে দিতে তিনি এতটুকুও দ্বিধাবোধ করলেন না সে দিন । গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বললেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও সংকট মুহূর্তে জেগে উঠতে দেখছি একটা দখলদারি রাজনীতি যা গোটা অবস্থাটাকেই ক্রমাগত এক শোচনীয়তার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে । মীমাংসা হবার বদলে পাকে পাকে তার অবনয়নই ঘটতে থাকছে শুধু । কেবলই দেখতে পাচ্ছি ধাপে ধাপে নেমে আসার লক্ষণ ।" তাঁর সীমাহীন উৎকণ্ঠা প্রত্যক্ষ করে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললাম, "শ্রদ্ধেয়া অমিতাদি (আশ্রমকন্যা অমিতা সেন), মহাশ্বেতাদি (সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী), অম্লানবাবু (প্রাক্তন উপাচার্য অম্লান দত্ত), শিবনারায়ণবাবু--সকলের সঙ্গেই কথা বলেছি, ওঁরা সকলেই চিন্তিত, সন্ত্রস্ত, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের শান্তিনিকেতনের পুনরুজ্জীবন অসম্ভব নয় বলেই মনে করেন । মৃত্যুর কিছু দিন আগে শ্রদ্ধেয়া অমিতাদি তো এ-বিষয়ে তাঁর উদ্বেগের সঙ্গে সঙ্গে সংকটমোচনে আশাবাদের বাণীও আমাকে শুনিয়েছিলেন । আমাদের প্রয়াসে সক্রিয়ভাবে সামিল হবার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি ।" ধ্যানগম্ভীর শঙ্খ ঘোষ সে দিন যদুনাথ সরকারের সতর্কবাণী থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বোঝালেন আমাকে পরম মমতায় । বেলা গড়ালে তাঁর চরণ ছুঁয়ে যখন নেমে আসছি, পিঠের উপর তাঁর সূর্যকরোজ্জ্বল স্নেহস্পর্শ যেন সারা জীবনের অমূল্য এক প্রাপ্তি ।

'ভালোবাসা'র 'শান্তিনিকেতন: অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ' সংখ্যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই, বলা বাহুল্য, বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল । ওই সংখ্যার প্রায় সব কপিগুলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেলে, বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা প্রকাশক সংখ্যাটিকে বই আকারে প্রকাশের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন । শেষমেশ ২০০৯ সালে 'পুনশ্চ' প্রকাশনা থেকে আমার সম্পাদনায় 'বিশ্বভারতী ও তার ভবিষ্যৎ' যখন ঢাউস বই হয়ে প্রকাশ পেতে চলেছে, তার অব্যবহিত আগে শঙ্খবাবুর সপ্রাণ সহযোগিতাও মনে রাখার মতো । তিনি পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায় পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে যথা সময়ে তা গ্রন্থভুক্ত করার অনুমতি দিয়েছিলেন ।

এর পর থেকে সময়ে-অসময়ে সারা জীবন তাঁর কাছ থেকে সাহায্য, পরামর্শ, উপদেশ পেয়েছি । হয়তো তাঁর কাছে সশরীরে যাওয়া হয়নি খুব বেশিবার--এ-ব্যাপারে আমার স্বভাবগত কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে, তাঁকে অকারণে বিরক্ত করতে যাওয়া আমার কাছে অসমীচীন মনে হয়েছে, বরং তাঁর সমুদ্রসম সৃষ্টির কাছেই নতজানু হয়ে কুড়োবার চেষ্টা করেছি কিছু নুড়ি, কিছু ঝিনুক--কিন্তু লিখতে বসে যখনই কোনও সমস্যায় পড়েছি--তা সে ব্যাকরণ নিয়েই হোক, কিংবা ছন্দ নিয়ে--নির্দ্বিধায় ফোন করেছি তাঁকে । এমনও হয়েছে দিনে তিন-চারবার ফোন করতে হয়েছে, কিন্তু কখনও কোনও মুহূর্তে তাঁকে বিরক্ত হতে দেখিনি । অপরিসীম ধৈর্যে, স্নেহে প্রকৃত শিক্ষকের মতো তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সবটা । বুঝেছি আপাত পাষাণ মানুষটি আসলে জলই--জলই পাষাণ হয়ে আছে...।
এই সে দিনও, মৃত্যুর কয়েক মাস আগে, তাঁকে দীর্ঘক্ষণ বিরক্ত করেছি ছন্দ নিয়ে । সমাজ মাধ্যমে এক বন্ধুর পোস্ট করা কবিতায় ছন্দে বেশ কিছু অসংগতি দেখে কমেন্টবক্সে ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেই, তাঁর ঔপন্যাসিক বান্ধবী রে রে করে উঠলেন; লিখলেন, আমি নাকি ছন্দের কিছুই জানি না, তিনি আমার থেকে অনেক ভাল ছন্দ জানেন, তাঁর বন্ধুর পোস্ট করা কবিতায় কোথায় কোনও ছন্দ বিভ্রম নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি । যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম তাঁর ভুলগুলো সম্পর্কে, তবুও কেন জানি না, হয়তো নিজের ইগো আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণেই, কিংবা, কে জানে, হয়তো লক ডাউনের হতাশা কাটাতে, ফোন করে বসলাম খোদ শঙ্খ ঘোষকেই । তিনিই তো আমার ছন্দের শিক্ষক । তাঁর কথাই তো শেষ কথা ! তাঁর কাছে পুরো ঘটনাটা ব্যক্ত করে অভিমানী গলায় বললাম, "তা হলে?"
"তা হলে আর কী ! তোমার কোনও ভুল নেই ।"

আমি তো জানি আমার কোনও ভুল নেই, কিন্তু তাঁর মুখ থেকে এই কথা শোনা এক অনির্বচনীয় প্রাপ্তি, লেখক জীবনের এক অবিস্মরণীয় স্বীকৃতি । সমস্ত মন খারাপ নিমেষে উধাও হয়ে গেল । এক সবুজ স্নিগ্ধতায় ভরে উঠল নির্জন দুপুর, পাঁচিলের কাক, শুকনো কলতলা... এক অমলিন আবেশে আচ্ছন্ন হল এক মুঠো লেখালিখি, এক চিলতে জীবন, দূরের তালগাছ ! আকাশের ছদ্মবেশে যেন মুক্তি এসে দাঁড়াল আমার অসুখ অপ্রাপ্তি আর অনন্ত বন্দিত্বের সামনে ।
আজ কার কাছে যাব এই মড়কের দিনে ?
(লেখাটি 'লেখাজোকা' সাহিত্যপত্রের মেঘ সংখ্যা (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২১)য় প্রকাশিত ।)
(ছবিঋণ : আনন্দবাজার, উইকিপিডিয়া, হিন্দুস্থান টাইমস ।)
Comments