পবিত্র মুখোপাধ্যায় : বনস্পতির ছায়া
- rajatsubhrablog
- Dec 12, 2023
- 6 min read
(১২ ডিসেম্বর মহাকবিতার কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন । ৯ এপ্রিল ২০২১ আমরা তাঁকে হারিয়েছি । তাঁর কবিতা বিশ্লেষণ আমার অভিপ্রায় নয়, কারণ, সত্যি কথা বলতে কী, তাঁর কবিতার গুণাগুণ বিচারের ক্ষমতা আমার নেই; বরং তিনি আমার কবিতাকে কী চোখে দেখতেন, কীভাবে ধন্য হয়েছি তাঁর স্নেহস্পর্শে...এই সব ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়েই মানুষটিকে ফিরে দেখা । )

এক অখ্যাত অনতিতরুণ কবির প্রথম বোর্ড বাঁধাই চার ফর্মার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অর্থনৈতিক সহ সমস্ত দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে গেলে প্রকাশকের কতটা বুকের পাটা লাগে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সে কথা জানে । আমরাও জানি এই বাংলার প্রায় সব যুগের সব বিখ্যাত কবিরই প্রথম দুয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশকের নয়, কবির পয়সাতেই বানানো । কিন্তু পবিত্র মুখোপাধ্যায় এমনই একজন প্রকাশক যিনি সেই ২০০৪ সালে--যখন আমার বয়স দু'অংকের ঘরে--'অনিঃশেষ ফুলজন্ম' নিজের পয়সায় প্রকাশ করেছিলেন । হ্যাঁ, 'শবযাত্রা' কিংবা 'ইবলিশের আত্মদর্শন' প্রণেতা কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের কথাই বলছি, যে উচ্চতার কবি, আমরা বিশ্বাস করি, একটা জাতির জীবনে একশো বছরে হয়তো একবার আসেন ।

তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের গল্পটা আগে বলি । সেটা ২০০০-০১ সালের কথা । 'ভালোবাসা' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার চিন্তাভাবনা করছি । যত দিন যাচ্ছে ভাবনাটা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে, স্বপ্নটা ক্রমশ অবয়ব পাচ্ছে । প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে । নতুন লেখার জন্য অনেক বিখ্যাত কবি-লেখকের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি । তাঁরা কেউ গ্রহণ করছেন, কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেন । জীবনের নিয়মই তো এই । পবিত্রবাবু খুব নরম মনের মানুষ । তিনি কাউকে ফেরাতে পারেন না বোধ হয় । তবে আমার টেলিফোনে তিনি যে খুব উৎসাহী হলেন এমন তো নয়ই, বরং উদাসীনতা প্রদর্শন করলেন বলেই মনে হল । কিন্তু আমিও ছাড়বার পাত্র নই । তাঁর লেখা চাই-ই । আমার নাছোড় আবেদনে কিছুটা বিরক্ত হয়েই, অনেকটা 'চ্যাং মুড়ি কানি'কে বাঁ হাতে ফুল ছুড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে, শেষমেশ তিনি একখানা কবিতা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ডাকযোগে ।
কবিতা এল । পত্রিকা প্রকাশ পেল । আরও এক-দুটো সংখ্যা বেরোল । সেগুলো যথারীতি পাঠানোও হল ওঁকে । এবং কী আশ্চর্য, পত্রিকা হাতে পাবার পর, কয়েকটা সংখ্যা নেড়েঘেঁটে দেখে, এ আমার পরম সৌভাগ্য, আমার প্রতি তাঁর ব্যবহারের চরম পরিবর্তন ঘটল ! কিছু দিনের মধ্যেই তিনি বড় আপন করে চিঠি লিখলেন আমায় । সে চিঠির কিয়দংশ আপনাদের জ্ঞাতার্থে আমি এখানে উদ্ধৃত করছি ।

"প্রিয় রজত, 'ভালোবাসা'র শারদ ১৪০৯ সংখ্যা আর পাঁচটা সাধারণ সাহিত্যপত্রের চাইতে একদম আলাদা চরিত্র পেয়েছে । এর আগেও 'ভালোবাসা'র সংখ্যা নিজস্ব রুচি ও ভাবনার পরিচয় দিয়েছে । তবে এ সংখ্যাটি খুবই সুনির্বাচিত লেখায় ভরা ।
চিঠিপত্রের অভিমতগুলি লেখকদের উৎসাহিত করবেই । কাগজটি যে পাঠকের সম্পূর্ণ মনোযোগ দাবি করে তা পত্রলেখকগণ সশ্রদ্ধায় বলেছেন । নানা পেশার রুচিবান মননশীল পত্রলেখকদের সমাবেশ একটি পত্রিকায় আজকাল খুব চোখে পড়ে না । দেশ পাক্ষিকের চিঠিপত্র এক সময়ে সাড়া জাগাত । কেননা তখন বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক, অর্থাৎ পত্রিকা ভবনের কোনও কর্মচারী-লেখকের গুণকীর্তনের উদ্দেশ্যে, চিঠি নিয়মিত ছাপা হত না । পত্রলেখকদের মতামতে মননশীলতার পরিচয় থাকত, স্তুতি থাকত না আজকের মতন । ছোট্ট অথচ মনন প্রধান সাহিত্যপত্র 'ভালোবাসা'য় প্রকাশিত চিঠিগুলো খোলামেলা, নির্বিশেষ আর যুক্তিনির্ভর । তাই এত কথা মনে হল ।
কবিতাগুচ্ছ সুনির্বাচিত । ভাল লাগল সমরেন্দ্র সেনগুপ্তর 'শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে' কবিতাটি । বিশেষভাবে বলতে হয় বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের 'নদী ১৯৪৭' কবিতার কথা । 'দুটো দেশের মাঝখান দিয়ে / বয়ে চলেছে একটা নদী / নদীর নাম রক্ত ।' পারলে সমস্ত কবিতাটিই উদ্ধৃত করতাম, কারণ বেদনা ও প্রজ্ঞা জড়িত কবিতা স্পর্শ করে, চিন্তা জাগায় । কৃষ্ণা বসুর কবিতাটি মেয়েদের দমন-পীড়ন নিয়ে সুলিখিত কবিতা । মনুজেশ মিত্রর একটি লাইন স্মরণীয়--'যে পাথরে ফোটে ফুল / সে পাথর এখানেই আছে ।' সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের 'স্মৃতি ধুলোবালিতে' একটি উত্তীর্ণ কবিতা । তরুণদের কবিতার মধ্যে নানা ভাললাগার স্থান রয়েছে ।
'চতুরঙ্গ' পত্রিকার সম্পাদক, মনস্বী লেখক আবদুর রাউফের 'আত্মশক্তির জাগরণে ধর্মীয় ভিত্তির বিপত্তি' এই হিংসাবিদীর্ণ সময়ে সকলের পড়া উচিত । তিনি মুক্ত মনের মানুষ, চিন্তাশক্তির প্রখরতা ও স্বচ্ছতার চমৎকার মেলবন্ধন দেখি তাঁর প্রবন্ধে । আচার-অনুষ্ঠানগত ক্ষুদ্র ধর্মাচরণের বিপরীতে ধর্মের মানবিক আবেদন যে কত দূর প্রসারিত হতে পারে, এবং তা যে কতটা কল্যাণকর, তিনি তাঁর নানা প্রবন্ধে যুক্তি ও অনুভবের সাহায্যে দেখিয়েছেন । 'ভালোবাসা'য় মুদ্রিত প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ, ইকবাল, নজরুল এবং বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায় আত্মশক্তির জাগরণের আহ্বান কীভাবে ধরা পড়েছে তার চমৎকার আলোচনা । রবীন্দ্রনাথ ও ইকবাল আত্মশক্তির উদ্বোধন ও জাগরণের কথা বলেছেন কবিতায়, ধর্ম বর্জনের কথা বলেননি কেউই, অর্থাৎ নাস্তিকতাকে সমর্থনও করেননি । 'কিন্তু এই মহাকবিদ্বয়ের কেউই পাশ্চাত্য প্রদর্শিত নাস্তিক্যের পথে আত্মশক্তির উদ্বোধনের পন্থায় আস্থা স্থাপন করতে পারেননি; প্রাচ্যের মহান ধর্মীয় ঐতিহ্যের নতুনতর ব্যাখ্যার মধ্যেই পথ খুঁজেছেন ।' প্রবন্ধটি এতই প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী যে এর বহুল প্রচার হওয়া জরুরি মনে হয়েছে ।
এ ছাড়া কবিরুল ইসলাম, স্বরাজ সেনগুপ্ত, অনিল আচার্য, জয়া মিত্র সকলেই মনন সমৃদ্ধ গদ্য লিখেছেন এই আকারে ছোট কিন্তু ঐশ্বর্যে ভরা পত্রিকাটিতে । আর কাগজের সমস্ত লেখা নিয়ে রজতশুভ্র লিখেছেন অন্য ধরনের সম্পাদকীয় 'সৃষ্টির সবুজ অন্দরমহলে' । সুলিখিত, স্বাধীন মতামতে পূর্ণ । ধন্যবাদ রজতশুভ্রকে । এলোমেলো লেখায় কাগজের পাতা না ভরে দিয়ে, ভাব-ভাবনায় সমৃদ্ধ একটি পত্রিকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন রজত । সর্বত্র চিন্তা আর পরিকল্পনার ছাপ । প্রকৃত চরিত্রে লিটল ম্যাগাজিন হল 'ভালোবাসা' । সম্পাদক ও সহযোগী বন্ধুদের অভিনন্দন জানাই ।
পবিত্র মুখোপাধ্যায়,
২২ বি, প্রতাপাদিত্য রোড,
কলকাতা ৭০০০২৬ ।"

এর পর থেকে 'ভালোবাসা'র অধিকাংশ সংখ্যাতেই তিনি লিখেছেন মনের আনন্দে--কখনও কবিতা, কখনও প্রবন্ধ । এই যে তিনি আমায় ভালবেসে কাছে টেনে নিলেন, ক্ষুদ্র এক তৃণকে আশ্রয় দিলেন বনস্পতির ছায়ায়, এরই ফলে প্রকাশ পেল ৫৬ টি প্রেমের কবিতা নিয়ে আমার প্রথম বোর্ড বাঁধাই কাব্যগ্রন্থ 'অনিঃশেষ ফুলজন্ম' । এ বইটি তিনি কেন নিজের খরচে 'কবিপত্র' থেকে প্রকাশ করেছিলেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন পরবর্তী কালে । তাঁরই লেখা একটি প্রবন্ধে । লেখাটির শিরোনাম--'অনুভূতিদেশের আলো' । জানি না প্রকাশক বলে তাঁর ওপর কোনও চাপ তৈরি করা হয়েছিল কি না । বাংলা সাহিত্যের ক্লেদাক্ত রাজনীতির পাঁক তাঁর অপাপবিদ্ধ মনে কোনও দিন আঁচড় কাটতে পারেনি । পাঠকের অবগতির জন্য আমি সমগ্র লেখাটিই এখানে উদ্ধৃত করছি ।

"রজতশুভ্র মজুমদার এ কালের পরিচিত তরুণ কবি । আমি ওঁর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়ে কিছু বছর আগে 'অনিঃশেষ ফুলজন্ম' প্রকাশে সাহায্য করেছিলাম । সেটা কবিতাকে ভালবেসেই । আমার কাছে আগে কবিতা, পরে কবির সঙ্গে পরিচয় । আর তা না হলেও অসুবিধে নেই । কবি কবিতার মধ্যেই সর্বসময় অবস্থান করেন । নানা সাংসারিক দায়ে আবদ্ধ থেকেও, কবিতার প্রতি আত্মনিবেদন করতে পারেন যিনি, তিনিই কবি প্রাথমিকভাবে, তারপর তার প্রস্তুতির পর্ব-পর্বান্তর ।
আমি মনে করি, রজতশুভ্র কবি । তাঁর মধ্যে কবিতার জন্য দুর্মর ভালবাসা আছে । নির্মাণের আকুতি ও সফলতা মিশেছে । আমি 'অনিঃশেষ ফুলজন্মে'র ছোট পরিসরের কবিতাগুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি এর সুন্দর প্রকাশভঙ্গি ও ভাবের একমুখিনতার জন্য । শব্দ নির্বাচনে শুচিবায়ুগ্রস্ততা নেই রজতশুভ্রের । অথচ 'আধখানা মুখ বাইরে রেখো, আধখানা মুখ অন্ধকারে' শঙ্খ ঘোষের এই কবিতার সূত্র একজন প্রকৃত কবিই বিশ্বাস করেন । রজতশুভ্রও তাই করেন দেখে, চারপাশের অগণিত কৃত্রিম পণ্যসম্ভারের মধ্য থেকে, তাঁকে বেছে নিয়েছিলাম । এই এত বছর পরেও রজতের কবিতায় নিবেদিত প্রাণ দেখে, আবার কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হয়ে আছি ।
'অনিঃশেষ ফুলজন্ম' প্রেমের কবিতা সংকলন । একটা আশা ও প্রত্যাশা বারবার ধ্বনিত হয়েছে প্রেমের শর্তে । শুধু অবিরাম সংশয় ও প্রত্যাশা পূরণের কথা নয়, জীবনকে নানামুখীন করে দেখতে বা দেখাতে পেরেছেন রজতশুভ্র ।
'পাখিটি অতিথি কৃষ্ণ-রাধার দেশে পাখিটি পেয়েছে এ দেশীয় এক প্রিয়া পাখিটি জানে কি শীত শেষ হলে তাকে
ফিরে যেতে হবে সুদূর সাইবেরিয়া ?'
'পাখি পরিযায়ী' কবিতার শুরু প্রেমের উন্মেষ ও সংসারে, প্রতীকী তাৎপর্যে তা হয়ে ওঠে মানুষেরই গভীর অনুভবের কথা :-
'পাখিটি ভাবছে প্রিয়ার সঙ্গে তার
এই দেওয়া-নেওয়া কালজয়ী, শাশ্বত
ঈর্ষায় নীল মহাকাল গুনে নেয়
শীত শেষ হতে বাকি আছে আর কত
#
শীত শেষ হলে পাখিটি ফিরবে দেশে
উড়ো পালকের গায়ে মেখে আনা ছবি
ধুয়েমুছে যাবে বিপুল কালের স্রোতে
কোথায় হারাবে ভিনদেশি বান্ধবী !'
এই অর্ধেক মুখ প্রকাশ্যে, আর অর্ধেক অগোচরে রাখার কাব্যিক শিল্পই তো আয়ত্ত করেছেন রজতশুভ্র । এ রকম অনেক অনেক উদাহরণ ছড়িয়ে আছে বইটির সর্বত্র ।
এই বইয়ের সব কবিতায় ছন্দ সংযোজন রয়েছে, যার ফলে কবিতাগুলি মনে রয়ে যায় । নিছক গদ্য কবিতায় এই দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার শর্ত থাকে না । আর এই পাখির প্রতি সমবেদনায় আর্ত কবি কত সুন্দরভাবে বলেন :-
'গত বন্যায় কত দূর দেশ থেকে বাসাহারা এক ভিজে পালকের পাখি
আমার বাগানে আশ্রয় নিতে এলে আমি তাকে তুলে ভেতরের ঘরে রাখি!'
এই সমবেদনা কবির ধর্ম । রজতের কবিতায় পাখি, মানুষ, আকাশ একই সমবেদনার সূত্রে গ্রথিত রয়েছে । প্রেমের কবিতা বলে খণ্ডিত করলে ঠিক হবে না । বিচিত্র অনুভূতির সূত্র সমন্বিত রজতের কবিতার মূল সূত্র অনুভূতির জগৎ । পাঠক সেই অনুভূতিতে দ্রব হবেন, আমারই মতন, বিশ্বাস করি ।"
( এ কে ডিস্ট্রিবিউটর্স, এন সি সেন রোড, পুরুলিয়া কর্তৃক প্রকাশিত 'অনিঃশেষ ফুলজন্মে'র পরিমার্জিত সংস্করণে এই প্রবন্ধটি সংকলিত রয়েছে । )

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে পবিত্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত 'কবিপত্র' একটি যুগান্তকারী নাম, এ কথা কবিতাপিপাসু বাঙালি মাত্রেই জানেন । পত্রিকা সম্পাদকের নিগূঢ় প্রশ্রয়ে ঐতিহাসিক সে পত্রিকায় অজস্র কবিতা লিখেছি বছরের পর বছর । এও আমার এক প্রাপ্তি বইকি । পবিত্রবাবুর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী কবিবন্ধু অনন্ত দাস, এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, একাধিকবার 'কবিপত্রে' আমার বই নিয়ে আলোচনাও করেছেন । আমি 'কবিপত্রে'র জন্য অন্তর থেকে গর্ব অনুভব করি । তাকে অতৃপ্ত আত্মার মতো ঘুরে বেড়াতে হয়নি পথে পথে । সে শান্তিতে ঘুমোতে পেরেছে উপযুক্ত সময়ে । এ তো সম্ভব হয়েছে পবিত্রবাবুর বিচক্ষণতার জন্যই, তাঁর দূরদর্শিতার কারণেই ।
অথচ এই মানুষটির দূরদর্শিতার অভাবই সংসার জীবনে তাঁকে অসফল করে তুলেছিল । নির্লোভ পবিত্র মুখোপাধ্যায় সারা জীবন কলেজে শিক্ষকতা করেও শেষ জীবনে কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছিলেন । সঠিক সময়ে সুবোধদা ( কবি সুবোধ সরকার ) অকৃপণ সাহায্যের হাত না বাড়ালে করোনার অনেক আগেই হয়তো আমরা তাঁকে হারাতাম । সুচিকিৎসায় সাড়া দিয়ে কঠিন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি আবার ঋজু হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন । আবার ফিরে এসেছিলেন কবিতায় । দু'-একটা অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে শুরু করেছিলেন । কিন্তু শেষরক্ষা হল না । মারণ আঘাতটা হানল করোনাই । অকুতোভয় সৌরভ ( সৌরভ চন্দ্র ) যখন হাসপাতালের বেডে মৃত্যুপথযাত্রী কবির মুখের কাছে মোবাইল ধরে গলা রেকর্ড করছে, তিনি তখনও অবলীলায় বলে চলেছেন, "এখন একটু ভাল আছি !"
পবিত্রবাবু আপনি সত্যিই ভাল আছেন । ভাল থাকবেন । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আপনাকে ভাল রাখবে ।
Comments