দ্বিরাগমন : এক মন কেমনের চিঠি
- rajatsubhrablog
- Sep 25, 2023
- 2 min read
(আজ ২৫ সেপ্টেম্বর । মন কেমনের দিন । এক অনির্বচনীয় অনুভূতিতে শিরশির করে উঠল ভেতর-ঘর, কেঁপে উঠল সারা শরীর !)

ক'দিন থেকেই মৃত মানুষদের কথা মনে পড়ছে খুব । কেন জানি না একটা প্রকাশহীন কষ্ট তোলপাড় করছে মনের মধ্যে, যে রকম জিওল মাছ ওইটুকু হাঁড়ির মধ্যে তোলপাড় করে । এরই মধ্যে এই পুরনো কার্ডখানা কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ফিরিয়ে দিল আমার আলমারির তাক, যে ভাবে ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়া জিনিস সমুদ্র আবার ফিরিয়ে দেয় কিছু পরে । কার্ডটা হাতে পেয়ে কত স্মৃতি ফিরে এল ! সুনীলদা, আহা সুনীলদা... 'কৃত্তিবাসে'র গন্ধ, আসল 'কৃত্তিবাসে'র গন্ধ, 'বগলে ভরে' না-ফেরার দেশে নিয়ে চলে যাওয়া আপনার আসল 'কৃত্তিবাসে'র গন্ধ !

এই কার্ডটা পাঠানোর জন্য সে সময়ে (আহা, কত বসন্ত পেরিয়ে গেল !) যে-মানুষটা আমায় ফোন করেছিলেন, সেই পিনাকীদাও (পিনাকী ঠাকুর) আজ আর নেই । যে-দুই প্রখ্যাত অগ্রজ কবির সঙ্গে ওই আড্ডায় কবিতা পড়েছিলাম, সেই মল্লিকাদি (মল্লিকা সেনগুপ্ত) আর জয়দেবদাও (জয়দেব বসু) আর নেই । নেই ওই অনুষ্ঠানে আগাগোড়া বসে যিনি সারাক্ষণ উৎসাহ দিয়ে গিয়েছিলেন, আমার সেই পরম আপনজন নবনীতাদি--নবনীতা দেবসেনও । আমাকে বাদ দিলে একমাত্র সংগীত শিল্পী শান্তনুদা (শান্তনু রায়চৌধুরী) ছাড়া এই কার্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আর সব মানুষগুলোই আজ মৃত ! তবে কি আমারও সময় হয়ে এল অসময়েই...

এই সব হাবিজাবি চিন্তা ভাবনার ভেতরেই হঠাৎ মনে হল, সে দিন তো আরও অনেক সম্মাননীয় অগ্রজ কবি ও অকবি বন্ধু ছিলেন ওই সভায় । কী সুন্দর করে আমাদের পড়া কবিতাগুলো বিশ্লেষণ করছিলেন কৃষ্ণাদি (কৃষ্ণা বসু); সুবোধদা (সুবোধ সরকার) ছিলেন ঘর আলো করে; শ্রীজাত ছিল; আমার 'অনিঃশেষ ফুলজন্ম' কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর খুব প্রশংসা করে বইটা চেয়েছিল নন্দনা (নন্দনা দেবসেন), কিন্তু তাকে দিতে পারিনি সেই মুহূর্তে, আউট অফ প্রিন্ট হওয়ার কারণে । পরে অবশ্য ওই বইয়ের প্রকাশক, বিখ্যাত কবি ও আপনজন, পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের অনুমতিতে তাঁরই ভূমিকায় সমৃদ্ধ হয়ে বইটির পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশিত হলে, নন্দনাকে তার মুম্বইয়ের ঠিকানায় পাঠাতে পেরেছিলাম একটা কপি ।

এঁরা তো সবাই জীবিত ! শুধু জীবিত কেন বলি, কবিতা, চলচ্চিত্র তথা শিল্পের নানা ক্ষেত্রে এঁরা তো ফুল ফুটিয়েই চলেছেন 'জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভরভসে' ! আমিও তবে উঠে দাঁড়াব অবসাদ ঝেড়ে, হতাশা ঝেড়ে, বুকের ভেতর গুমরে মরা এই ক'দিনের অব্যক্ত হাহাকারকে অস্বীকার করে আমিও তবে গেয়ে উঠব--"তরঙ্গ মিলায়ে যায়, তরঙ্গ উঠে,/ কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে ।/ নাহি ক্ষয়, নাহি শেষ, নাহি নাহি দৈন্যলেশ--/সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে ।।"
(ছবিঋণ : আনন্দবাজার, উইকিপিডিয়া ।)



Comments