top of page
Search

মোনালিসার হাসি




(বিশ্বের সবচেয়ে চর্চিত ছবির নাম মোনালিসা । আজ তার সৃষ্টিকর্তার জন্মদিন । ১৫ এপ্রিল । ১৪৫২ সালের এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন অমর শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি । স্রষ্টার জন্মদিনেই তাঁর সৃষ্টিকে ফিরে দেখা...)


ree

বিশ্ববন্দিত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কয়েকটি চিরস্মরণীয় কাজের মধ্যে 'ভার্জিন অব দ্য রকস', 'ম্যাডোনা অব দ্য কারনেশন', 'সেন্ট জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট' এবং 'ভার্জিন অ্যান্ড দ্য চাইল্ড' উল্লেখযোগ্য । কিন্তু যে কাজ তাঁকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে, বলা বাহুল্য, সে ছবির নাম 'মোনালিসা' । এই মোনালিসার প্রহেলিকাময় হাসির রহস্যোদ্ঘাটনে আজও সারা পৃথিবীর বিশিষ্ট শিল্পবেত্তারা ব্যাপৃত । এ ছবি নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই গবেষকদের । বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, লিওনার্দো তাঁর এই সৃষ্টিকে অমরত্ব দান করতে যে পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছিলেন, শিল্প বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলা হয় 'Sfumato effect' । অতি সূক্ষ্ম বিভিন্ন রঞ্জকদানা মিশিয়ে প্রায় ৪০ টি আণুবীক্ষণিক স্তরে রং চাপিয়ে মোনালিসার মুখে ছায়াময় দুর্বোধ্যতার যে চূড়ান্ত শিল্পসুষমা সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতেই মোনালিসার হাসিকে এত অপরূপ, এত মোহময়, এত রহস্যঘন বলে মনে হয় আজও । আরও আশ্চর্যের বিষয় এই, লিওনার্দো সম্ভবত আঙুলের সাহায্যেই এই অবিশ্বাস্য স্তরবিন্যাসের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন, কারণ এই সৃষ্টির কোথাও কোনও তুলির আঁচড় বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েনি ।


ree

Laboratoire du Centre de Recherche et de Restaurant des Musees de France এবং European Synchrotron Radiation Facility-র বিজ্ঞানীরা লিওনার্দোর মোনালিসা নিয়ে এই আবিষ্কারটি করেছেন । এই বিজ্ঞানীদলের নেতা Dr. Philippe Walter 'Angewandle Chemie' নাম্নী জার্নালে এ বিষয়ে তাঁদের গবেষণা ব্যাখ্যা করেছেন । বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারের জন্য ছবিটির ওপর X-ray fluorescence spectroscopy নামে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন । এই পদ্ধতিতে অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক্স রশ্মি ছবিটির ওপর প্রয়োগ করে রঙের সূক্ষ্মতম স্তরগুলিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় । তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন, এমন অনেকগুলি স্তর রয়েছে যেগুলির ঘনত্ব মাত্রই ২ মাইক্রোমিটার বা তারও কম, যা মানুষের একটিমাত্র চুলের ঘনত্বের ৫০ ভাগের এক ভাগ । মোনালিসার মুখের চামড়া যেখানে অপেক্ষাকৃত পুরু সেখানে একটার পর একটা স্তরের ওপর স্তর নির্মাণ করে প্রায় ৫৫ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত ঘনত্ব তৈরি করা হয়েছে । কালো এবং লাল এই দু'ধরনের রঞ্জকদানা দেখতে পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু তারা আয়তনে এতই ক্ষুদ্র যে, প্রচলিত সাধারণ পরীক্ষায় সেগুলিকে নির্ণয় করা একেবারেই অসম্ভব বলে বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে । বিশ্বখ্যাত এই ইতালীয় শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত সংস্থা Leonardo da Vinci Society-র সহ সভাপতি অধ্যাপক Francis Ames Lewis-এর একটি মন্তব্য এখানে উদ্ধৃত করছি--"Leonardo da Vinci was concerned with producing smooth tonal gradients from light to dark without any perceptible change like we see in real life and sfumato was essential to this."


ree

এ তো গেল মোনালিসাকে চিত্রিত করার Sfumato পদ্ধতির অধুনা আবিষ্কৃত কলাকৌশল, কিন্তু রক্তমাংসের মোনালিসা ? তাঁকে নিয়ে গবেষণা কত দূর ? এবার আসুন, ঢোকা যাক এই বিষয়টিতে । আনন্দের কথা হল, এখানেও বিজ্ঞান পিছিয়ে নেই । কিছুকাল আগেও মোনালিসার কোনও পরিচয় বিশ্ববাসীর জানা ছিল না । লিওনার্দোর এই মানসপ্রতিমা শুধু রহস্যময়ী হয়েই যুগ যুগ মানুষকে আনন্দ দিয়ে এসেছেন । কিন্তু পরে বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন, লিওনার্দোর এই ছবির মডেল ছিলেন লা জিওকোন্দা, যাঁর আসল নাম লিসা । লিসা ঘোরার্দিনি । ইতালীয় ব্যবসায়ী ফ্রান্সিসকো দেল জিওকোন্দার স্ত্রী লিসা আসলে লা জিওকোন্দা নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন । ঐতিহাসিকেরা আবিষ্কার করেছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর লিসা একটি কনভেন্টের সন্ন্যাসিনী হয়ে যান । ১৫৪২-এর ১৫ জুলাই ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওই কনভেন্টেই মারা যান ।


এইটুকু মাত্র তথ্য সম্বল করে ফ্লোরেন্সের একদল পুরাতত্ত্ববিদ সেখানকার সেন্ট উরসুলা কনভেন্টে খননকাজ শুরু করেন । খননকার্য চালিয়ে তাঁরা প্রায় অবিশ্বাস্য ও আশাতীত সাফল্যের মুখ দ্যাখেন । কনভেন্টের নীচে থেকে উদ্ধার হয় এক মৃত মহিলার মাথার খুলি এবং আরও নীচে কিছু হাড় । এক মাস খনন চালিয়ে শেষে একটি ছিন্নভিন্ন কঙ্কাল তাঁরা উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন । সমস্ত কঙ্কাল ও খুলিটি একই মহিলার কি না, হলে তা লিসা জিওকোন্দারই কি না, এ সমস্তই পরবর্তী গবেষণার বিষয়, লিসার সন্তানদের কঙ্কালের ডিএনএর সঙ্গে এই উদ্ধার হওয়া রহস্যময় কঙ্কালটির  ডিএনএর সামঞ্জস্য বিধানের বিষয়, কিন্তু আধুনিক প্রত্নবিজ্ঞান অর্ধ সহস্রাব্দ প্রাচীন এক নিগূঢ় রহস্যের ভয়াবহ রোমহর্ষক উন্মোচনে যে বলিষ্ঠ ও দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, তাও ওই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কিম্বা তাঁর অজরামর সৃষ্টি মোনালিসার হাসির মতোই এক জীবন্ত কিংবদন্তি বইকি !


(ছবিঋণ : উইকিপিডিয়া ।)

 
 
 

Comments


bottom of page