top of page
Search

মন খারাপের গল্প




(আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস । ১৯৯২ সাল থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে সারা পৃথিবীতে ।)


ree

"মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,

মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।"


সে না হয় হল, কিন্তু মন খারাপটা হয় কেন ? সত্যি, মন খারাপ যে কেন হয়, বেশিরভাগ সময়েই আমরা বুঝে উঠতে পারি না । কিন্তু বুঝতে না পারলেও, মন খারাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা সকলেই কিছু না কিছু করি । আমার এক বন্ধু আছে, মন খারাপ হলেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসে । কোনও কারণে সেটা সম্ভব না হলে, সোজা চলে যায় ছাদে । সেখানেও খোলা বাতাস, উন্মুক্ত আকাশ উপভোগ করে মন ভাল করার চেষ্টা করে প্রাণপণ । আরেকজনকে চিনি, মন খারাপ হলেই বাদাম খেতে শুরু করে । বাদাম খেতে সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যকরও বটে । ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলসে ঠাসা বাদাম অবসাদ কমিয়ে মন ভাল রাখতে সাহায্য করে, তার স্থির বিশ্বাস । কেউ আবার মন খারাপ হলে ঘুমোতে চলে যায় । ভাল ঘুম হলে, শরীর মন ফ্রেশ হয়ে যায়, ঘুম ভাঙলে মন খারাপ আর থাকে না । কেউ ধুলো ঝেড়ে প্রিয় বইটি পেড়ে আনে তাক থেকে, কেউ পছন্দের মুভি দ্যাখে, কেউ রান্না করে, কেউ আবার পুরনো বন্ধুর সঙ্গে ফোনে মেতে ওঠে গল্পগুজবে ।


মন খারাপ হলে আমি কী করি ? এগুলোর কোনওটিই না । মন খারাপ হলে আমি কবিতা শুনি--নিজের কবিতা, প্রিয় মানুষের গলায় । এই যেমন আজ এই বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে এই মুহুর্তে যে কবিতাটি আমি শুনছি, তার নাম 'শ্রীমতী', সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গলায় । আমার পাঠকমাত্রেই জানেন, আজ পর্যন্ত যত কবিতা আমি লিখেছি, তার অর্ধেকেরও বেশি সৌমিত্রদার গলায় ! নিজের সামান্য লেখাগুলো অসামান্য অমন কণ্ঠ পেয়ে যে সম্মৃদ্ধ হয়েছে, ঋদ্ধ হয়েছে, বলাই বাহুল্য । শিশুকাল থেকে যে অপু বাঙালির রক্তে আলোড়ন তোলে, সেই অপুর গলায় নিজের সৃষ্টিকে ফিরে ফিরে দেখা এবং দেখানোর এক অনির্বচনীয় আনন্দানুভূতি আমার সমস্ত আত্মপ্রচারের আড়ষ্টতাকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ।


ree

আর হ্যাঁ, এই কবিতাটির পাঠের একটা ইতিহাসও আছে । বেশ কিছু বছর আগে কলকাতা দূরদর্শনে (Doordarshan Kendra Kolkata) একটি সাক্ষাৎকার মূলক অনুষ্ঠানে কবিতাটি পড়েছিলাম আমি । পড়া শেষ হওয়া মাত্র আঁতকে উঠলেন পাশে বসা সুচিত্রাদি, "আবার লাশ ?" আসলে সে দিনের অনুষ্ঠানে আরও একটা লাশের কবিতা পড়ে ফেলেছিলাম ততক্ষণে ! ওই অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত লেখক সুচিত্রা ভট্টাচার্য ছাড়াও ছিলেন শঙ্করদা, মানে বিশিষ্ট কবি, আমাদের 'কবি সম্মেলনে'র শঙ্কর চক্রবর্তী । সম্ভবত সে সময়ে কিছু একটা বিপর্যয় চলছিল ভেতরে ভেতরে । ওই যে, কারণ না-জানা মন খারাপ ! তাই লাশের পর লাশ আসছিল কবিতায় ! পরে স্টুডিয়ো থেকে বেরিয়ে গালে-মুখে সুচিত্রাদির আদরমাখা স্পর্শ পেয়ে মন অবিশ্যি ভাল হয়ে গিয়েছিল পুরোপুরিই । সে দিন প্রথম সাক্ষাতেই বুঝেছিলাম, সুচিত্রাদি অন্য ধাতের মানুষ । একটা নরম ভালবাসায় ভরা মন আছে তাঁর । নারকোলের খোলার মতো ওপরের কাঠিন্যটুকু ছাড়াতে পারলে, ভেতরে, আহা, স্নিগ্ধ জল, কী মিষ্টি ! পরবর্তীতে যতবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে, ফোনে কথা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে, আমার এই ধারণা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে ।


ree

আজ সুচিত্রাদিও নেই, সৌমিত্রদাও । অগত্যা স্মৃতিচারণেই তাঁদের ফিরে ফিরে পাওয়া ! এও তো মন খারাপ খুলে বেরিয়ে এসে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে অনন্ত আকাশের নীচে দাঁড়ানোর উপায় এক !


(ছবিঋণ : উইকিপিডিয়া, পেজ ফোর, মিন্ট ।)

 
 
 

Comments


bottom of page