top of page
Search

রণজিৎ দাশ : এমন গোসল আমি আর কোনও কবিকে করাতে দেখিনি



(আজ ২৮ এপ্রিল, কবি রণজিৎ দাশের জন্মদিন । শঙ্খ ঘোষ পরবর্তী সময়ে আশির দশকের অন্যতম শক্তিমান ও খ্যাতিমান কলম রণজিৎ দাশের । স্বভাবলাজুক কবি তাঁর জন্মদিনটি প্রকাশ করতে চান না সহজে । শুধু ১৯৪৯ সালের কথাই লেখা থাকে সর্বত্র । আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে, তাঁর সৃষ্টি নিয়ে সামান্য দু'কথা...)


ree

রণজিৎ দাশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র কবি যিনি পাতিলে শুদ্ধ পানি ঈষৎ গরম করে, ধানের সোনালি খড় জ্বেলে, এবং সে জলে কিছু জিন পরিদের গাছ কুলের সুগোল পাতা ভাসিয়ে, জমায়েত ভিড়কে নিমেষে হালকা করে, কাঠের তক্তায় সেই মৃতদেহ শুইয়ে, তাকে চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে ঘিরে, মৃতের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে মৃতদেহকে জাগিয়ে তুলতে পারেন--"সাকিনা বিবির ছেলে হুমায়ুন, শুনতে পাচ্ছো আমার কথা কি ?" মৃতদেহ মাথা নাড়ে, যেন সে বলতে চায়, "হ্যাঁ, আমিই হুমায়ুন, কিন্তু তুমি কে ?" কবি তাকে বলেন, "ভাই, সকালে আমার নাম হরি, কিন্তু সন্ধ্যায় হোসেন-- আমাদের দু'জনের একই দিদি--নাটোরের বনলতা সেন ।"


তারপর তাকে শিখিয়ে দেন, বেহেশতে যাওয়ার পথে যদি তারা প্রশ্ন করে, "তোমার প্রিয় ফুল কী ?" বলবে তুমি, "সূর্যমুখী ফুল ।" যদি তারা প্রশ্ন করে, "তোমার প্রিয় পথ কী ?" বলবে তুমি, "পাঠশালার পথ ।" যদি তারা প্রশ্ন করে, "তোমার প্রিয় বন্ধু কে ?" তুমি বলবে, "লালন গোঁসাই ।"


এ সব গোপন কথা মৃতকে শিখিয়ে রণজিৎ দাশ পাতিলের জল ঢেলে, গ্রামীণ গভীর অন্ধ কুসংস্কারে নিরাশ্রয় লণ্ঠন জ্বেলে, সামুদ্রিক চট্টগ্রামে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে, মৃত মানুষের দেহ খুব যত্ন করে গোসল করান ।


কবি লিখেছিলেন, "প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব গানের মধ্যে বেঁচে থাকে--মাথা-নাড়া পাগলের মতো । সে গান শুনতে চাও ? শুধু তার বুকে কান পাতো ।" আমি রণজিৎদার কবিতার বুকে কান পাতি । কান পেতে শুনতে পাই এমন আশ্চর্য গোসলের গান ! কবি এই কাজই শুধু করেন, কারণ, তিনি অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করে নেন, "আমার জীবনে আর কোনও জলজ্যান্ত কুশলতা নাই ।"


সত্যিই । এই কাজই শুধু তিনি করেন । 'সমুদ্র সংলাপ' কিংবা 'ঈশ্বরের চোখ', 'বিষাদসিন্ধু' কিংবা 'দ্বিমেরুবিশ্ব'... রণজিৎদার সব কবিতাতেই তো এমন নিগূঢ় গোসলের শীতল শান্ত জলরেণু সরাসরি পাঠকের আত্মায় এসে লাগে ! সে রেণুতে চিত্ত ভিজিয়ে মহাকালের পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসি ! এমন গোসল আমি আর কোনও কবিকে কখনও করাতে দেখিনি ।


(ছবিঋণ: প্রথম আলো)


 
 
 

Comments


bottom of page